১০০ কোটি টাকার দুর্নীতিতে অভিযুক্ত অরবিন্দ কেজরিওয়াল
২০২৩ এর ৩০ অক্টোবরের পর থেকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে টানা ৯ বার তলব করেছে ইডি৷ কিন্তু, একবার বাদ দিয়ে বাকি ৮ বারই তিনি হাজিরা এড়িয়ে গিয়েছেন৷ শেষ পাঠানো সমনে বৃহস্পতিবারই ইডি দফতরে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু হাজিরা না দিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কেজরিওয়াল। কিন্তু, বৃহস্পতিবার দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়ে দেয় আপাতত, মমলাকারীকে রক্ষাকবচ দিচ্ছে না দিল্লি হাইকোর্ট৷ ইডির তৎপরতা শুরু হয়ে যায় এরপর থেকেই ৷
এর পর ইডি তাঁর বাড়িতে পৌঁছয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ । তল্লাশি অভিযান চালায় ঘণ্টা দুয়েক শেষে তাঁর মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়। এর পরেই কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করা হয় রাত ৯টা নাগাদ । ১১৪ ধারা জারি করা হয় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের আশপাশের এলাকায়। শুক্রবার পিএমএলএ আদালতে হাজির করানো হবে এই আপ প্রধানকে। দিল্লির মন্ত্রী তথা আপ নেত্রী অতিশী জানিয়েছেন, কেজরিওয়ালই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। তিনি সরকার চালাবেন জেলে বসে ।
কিন্তু, ঠিক কোন মামলায় গ্রেফতার করা হল কেজরিওয়ালকে? এর উত্তর লুকিয়ে অতীতে৷ ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর দিল্লি সরকার নতুন আবগারি নীতি বাস্তবায়ন করেছিল৷ কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষেই তা বাতিল করা হয়। তদন্তকারী সংস্থাগুলির মতে, নতুন নীতির অধীনে মদের পাইকারি বিক্রেতাদের লাভের পরিমাণ ৫ থেকে বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করা হয়েছিল।
ইডি, সিবিআইয়ের অভিযোগ, এই নতুন নীতির ফলে, অযোগ্য ব্যক্তিরা অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা পেয়েছে৷ লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রেও লঙ্ঘন করা হয়েছে নিয়ম৷ ইডি-র দাবি, এই আবগারি নীতি কাণ্ডে অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মণীশ সিসোদিয়া এবং কে কবিতা (বিআরএস নেত্রী, গত সপ্তাহে এই মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন) সহ রাজনৈতিক নেতাদের একটি ষড়যন্ত্রে শামিল হয়েছিলেন।
ইডির অভিযোগ, ব্যবসায়ী শরৎ রেড্ডি, মাগুন্তা শ্রীনিভাসুলু রেড্ডি এবং কে কবিতার সমন্বয়ে একটি দক্ষিণ গ্রুপ নতুন আবগারি নীতি ২০২১-২২ এর অধীনে দিল্লিতে ৩২টির মধ্যে ৯টি অঞ্চল পেয়েছিলেন। পাইকারী বিক্রেতাদের জন্য একটি ১২% লাভের মার্জিন পাওয়া গিয়েছিল এই নতুন নীতির জেরে এবং খুচরা বিক্রেতাদের জন্য ছিল প্রায় ১৮৫% লাভের মার্জিন। ইডির অভিযোগ, এই ১২% মার্জিনের মধ্যে ৬% পাইকারদের কাছ থেকে AAP নেতারা 'কিকব্যাক' (অর্থাৎ, আর্থিক সুবিধা) হিসাবে পেত৷ তা যেমন যেত দিল্লির সরকারি আধিকারিকদের কাছে, তেমনই যেত আপ নেতাদের কাছেও৷
ইডির অভিযোগ, এই গোটা দুর্নীতির জেরে আম আদমি পার্টি প্রায় ১০০ কোটি টাকা 'কিকব্যাক' পেয়েছিল৷ বিজেপি-র দাবি, এই টাকাউ গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনে 'ব্যবহার' করেছিল আম আদমি পার্টি৷
এই দুর্নীতির অভিযোগ সর্বপ্রথম দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর বিনয় কুমার সাক্সেনার নজরে আনেন দিল্লির তৎকালীন মুখ্যসচিব নরেশ কুমার৷ পাঁচ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে, তিনি নীতি প্রণয়নে পদ্ধতিগত ত্রুটির অভিযোগের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কুমার অভিযোগ করেছিলেন, এই "স্বেচ্ছাচারী এবং একতরফা সিদ্ধান্ত" নিয়েছিলেন তৎকালীন আবগারি মন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া। তিনি আরও বলেছিলেন যে, নতুন নীতির ফলে সরকারি কোষাগারে আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল৷ AAP নেতা এবং মন্ত্রীরা "কিকব্যাক" পেয়েছিলেন।
ইডি-র সূত্রের মতে, অভিযুক্ত এবং মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল ঘনিষ্ঠ সহযোগী বা সহকর্মীদের মধ্যে কিছু হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন এবং ফেসটাইম কলের বিশদ প্রমাণ রয়েছে তাদের কাছে৷ সেগুলি আবগারি নীতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে দিল্লি সরকারের কিছু সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের এই ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার ইঙ্গিত দেয়।
প্রথমে মামলাটির তদন্তভার হাতে নেয় সিবিআই৷ গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মণীশ সিসোদিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। নীতির মানি লন্ডারিং দিকটি খতিয়ে দেখতে তারপর তদন্ত শুরু করে ইডি।